বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন

আধুনিক শহরে সীমাহীন দুর্ভোগ!

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ৬.৪০ পূর্বাহ্ণ
  • ৬২ বার

জলাবদ্ধতা, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, যখন-তখন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, ভাঙা সড়ক, মশার যন্ত্রণা, ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট, গণপরিবহনে নৈরাজ্য, যানজট, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ—সব মিলিয়ে রাজধানী ঢাকায় বিশৃঙ্খলা যেন নিত্যসঙ্গী। ফলে একসময়ের প্রাণচঞ্চল এই শহরটি আজ পরিণত হয়েছে দুর্ভোগের নগরীতে।

রাজধানীবাসীর অভিযোগ, মূলত একটি রাজধানী যেভাবে চলার কথা, সেভাবে চলছে না ঢাকা। বিগত সরকারের আমল থেকেই এসব সমস্যায় জর্জরিত নগরবাসী। সরকারের পতনের পর যেন পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে গেছে। পুরনো সমস্যাগুলোর সমাধান তো দূরের কথা, বরং প্রতিদিন নতুন নতুন সংকট যুক্ত হচ্ছে নাগরিক জীবনে।

বিশেষ করে প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি—সব জায়গাতেই ব্যাটারিচালিত রিকশার বেপরোয়া চলাচল এখন যাত্রী ও পথচারীদের জন্য আতঙ্কের নাম। যানজটের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। সড়কের অব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণহীন গণপরিবহন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিত্যনতুন দুর্ভোগে রাজধানীতে বসবাসে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকেই। তবুও জীবন-জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে ঢাকামুখী হচ্ছে মানুষ। সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, ডিএসসিসি ও ডিএনসিসিসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থা নানা উদ্যোগের কথা বললেও বাস্তবে উন্নতি দৃশ্যমান নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট, যানজট, জলাবদ্ধতা, গণপরিবহন সংকট, বেহাল রাস্তাঘাট, মশা, আবর্জনার স্তূপ কিংবা মানুষের হাঁটা-চলার জন্য ফুটপাতের অভাব—কোনো সমস্যারই সমাধান দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া রাজধানীতে প্রবেশের চারটি প্রধান প্রবেশমুখেও প্রতিদিন লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। কর্মস্থল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে কাটাতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না ঘটলে ঢাকা আরও অচল নগরীতে পরিণত হবে। রাজধানীকে বাসযোগ্য রাখতে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আগামী দিনে এ শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

নগরবীদ ও পরিবেশবাদী ইকবাল হাবিব বলেন, নগরজুড়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে ১১টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা প্রায় ৫৪টিরও বেশি সংস্থা সমন্বয়হীনভাবে কাজ করছে। পারস্পরিক বোঝাপড়া ও পরিকল্পিত কর্মধারা না থাকায়, যথাযথ সমীক্ষা ছাড়া গৃহীত বড় বড় প্রকল্পগুলো এখন নাগরিক জনস্বাস্থ্য, চলাচল ও জনপরিসেবাকে দুর্বৃত্তায়ন দৌরাত্ম্যের পথে ঠেলে দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আইনের বিধিবিধান ও নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তা বাস্তবায়নে অনীহা বা অবজ্ঞাই এই দুরবস্থার মূল কারণ। যা জবাবদিহিতামূলক প্রয়োগ বা এনফোর্সমেন্ট ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। তাই যথার্থ প্রকল্প গ্রহণ, দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল বাস্তবায়ন, একইসঙ্গে বাস্তবায়নকালীন জনভোগান্তি নিরসন নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনি নগরসেবায় জবাবদিহিতাহীনতার অবসান ঘটাতে ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-অ্যাডমিন, প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ) মোঃ আনিছুর রহমান বলেন— “অটোরিকশা চলাচল নিয়ে আমাদের অবস্থান একেবারেই স্পষ্ট। মেইন রোডে কোনোভাবেই অটোরিকশা প্রবেশ করতে পারবে না— এ লক্ষ্যে আমাদের পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

মোটরযান আইনের বিধান অনুযায়ী অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার সুযোগ না থাকায় আমরা ডাম্পিং কার্যক্রম পরিচালনা করি। মেইন রোডে কোনো অটোরিকশা পাওয়া মাত্রই সেটি সঙ্গে সঙ্গে ডাম্পিং করা হয়।

আগামী ২ নভেম্বর থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হবে— যেখানে মেইন রোডে অটোরিকশা চলাচলে থাকবে ‘জিরো টলারেন্স’।

এছাড়া, যাত্রীবাহী বাসগুলো নির্ধারিত বাসবে ছাড়া যাত্রী উঠানামা করলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সড়কে কোনোভাবেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।

এই কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নে নাগরিকদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ— আমরা সেই সহযোগিতাই প্রত্যাশা করছি।”

Please Share This Post in Your Social Media

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

Footer Widget

Footer Widget

© 2019, All rights reserved.
Design by Raytahost.com
error: Content is protected !!